সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মিশনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ সোমবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে ‘গো লাইভ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সিকিউরিটিজ আইনের পরিপালন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত অনলাইন ডেটা সংগ্রহ, যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত জমা, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রদান, আর্থিক হিসাব সরাসরি প্রদানের জন্যই ‘স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম অফ ডিএসই’ নামের অনলাইন প্লাটফর্মটি তৈরি করেছে ডিএসই—যা প্রযুক্তি নির্ভর পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট রুপালী হক চৌধুরী এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম ৷
এ ছাড়াও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা (সিআরও) খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের চারটি উপাদানের মধ্যে একটি হলো স্মার্ট ইকোনমি। আর স্মার্ট ইকোনমির দুইটি সেক্টর হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেট। স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উদ্বোধন শুধু প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণ নয়, এটি স্মার্ট পুঁজিবাজার তৈরির অংশ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে স্মার্ট করার জন্য এর কার্যক্রমকে পেপারলেস করতে হবে। আর সেই পেপারলেসের যাত্রা আজকে এই প্লাটফর্ম চালুর মাধ্যমে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ডিএসই নিজস্ব স্মার্ট ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে পুঁজিবাজার যে স্মার্টের দিকে যাচ্ছে, সেটা ডিএসই গত বছর থেকেই শুরু করেছে। আজকে ছিল এর দ্বিতীয় উদ্যোগ।
স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার সুফল তুলে ধরে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের অন্যতম উপাদান হলো—স্টেকহোল্ডারদের তথ্য সঠিকভাবে নেওয়া। সেটা যদি না নেওয়া যায়, তাহলে আধুনিক পুঁজিবাজার করা সম্ভব হবে না। সেই তথ্যই স্মার্টভাবে নেওয়ার কার্যক্রম আজকে থেকে শুরু করা হলো। এতে তথ্য সঠিক সময় পাওয়া যাবে এবং সঠিক সময়ে নানা উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমরা যদি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কাজ করতে পারি, তবে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে পারব।’
বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট রূপালি হক চৌধুরী বলেন, অনলাইনে তথ্য জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন থেকে সময় অনেক বেঁচে যাবে। এতে করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য দ্রুততম সময়ে সবার কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সিস্টেমে সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে সিস্টেমের কাজ বন্ধ হয়ে না যায়।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা। সবার সঙ্গে কাজ করে বাজারের আরও উন্নতি করা। কোম্পানিগুলোর কিছু সমস্যা আছে। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাজারের এবং বিনিয়োগকারীদের কোনো সমস্যা বা ক্ষতি না হয়। আজকের এই সিস্টেমের ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ ছাড়াও তথ্য দেওয়া আরও সহজ হবে। এতে সময়ের যে ব্যয় হতো, সেটাও কমে যাবে। এটি সময়পযোগী কাজ হয়েছে।
ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য কোনোভাবে যাতে ভুল প্রকাশ না হয় এবং বাদ না যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে অনৈতিক মুনাফা করতে না পারে এবং ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আজকের এই উদ্যোগের জন্য ডিএসইকে অনেক ধন্যবাদ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শুরু হলো।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর এমডি ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম চালু হওয়ায় পুঁজিবাজার আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এখন থেকে সহজে নির্ভুল তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। আগে যেসব ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ভুল তথ্য প্রদান ও প্রকাশ করার ঝুঁকি ছিল, সেটি আর থাকবে না। কেউ কোনো অনিয়ম করলে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
মূল প্রবন্ধে সফটওয়্যারটির উদ্দেশ্য, ব্যবহার ও টেকনিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এবং বিভিন্ন মডিউল সম্পর্কে আলোচনা করেন ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান রবিউল ইসলাম। সমাপণী বক্তব্য দেন সিআরও খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ।