ইসরায়েলের নামনিশানাই মুছে দিলো বর্তমান বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র চীন। ঠিক এমন এক সময় চীন একাজটি করলো যখন বিশ্বের পরাশক্তিগুলো ফিলিস্তিনের পাশে না দাঁড়িয়ে একের পর এক ইসরায়েলে গিয়ে অর্থ, অস্ত্র ও সেনা পাঠিয়ে সবধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।
তার ঠিক বিপরীত কাজটিই করলো চীন। নিজেদের বৈশ্বিক মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের নাম মুছে দিয়েছে চীন। শীর্ষ দুই চীনা কোম্পানি বাইদু এবং আলিবাবা সোমবার মানচিত্রের যে অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করেছে, তাতে পাওয়া যাচ্ছে না ইসরায়েলের নাম।
প্রথম এই ব্যাপারটি খেয়াল করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ‘এমনকি লুক্সেমবার্গের মতো ক্ষুদ্র দেশের নামও (চীনা মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণে) দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ইসরায়েলের নাম নেই।’
প্রসঙ্গত, লুক্সেমবার্গের আয়তন মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার এবং ইসরায়েলের আয়তন ২২ হাজার ৭২ কিলোমিটার।
চীনের অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরও মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণনটি একই রকম আছে। চীনের ভেতরেও এ ব্যাপারটি নিয়েঢ আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
বৈশ্বিক মানচিত্রের অনলাইন সংস্করণ থেকে ইসরায়েলকে বাদ দিতে চীনের সরকারি পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশ এসেছে কি না— জানতে চাওয়া হয়েছিল বাইদু এবং আলিবাবা কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অপরদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে ঢুকে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিশ্বনেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েলি সৈন্যরা এ পদক্ষেপ নিল। তারা সুড়ঙ্গে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই তথ্য জানিয়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার প্রতিশোধে গোষ্ঠীটিকে গাজা উপত্যকা থেকে নির্মূলের লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলের সম্প্রসারিত স্থল হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে হামাসের তৈরি বিশাল ও বিস্তৃত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ককে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সংগীত উৎসবে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি
গতকাল আইডিএফের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গাজায় হামাসের প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও অন্যান্য গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। গাজার সুড়ঙ্গে হামাসের সামরিক স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করেছে ইসরায়েল।
হামাসের যোদ্ধারাও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক থেকে গুলি ছুড়েছে। আইডিএফ বলেছে, ‘সৈন্যরা হামাসের যোদ্ধাদের হত্যা করেছে এবং বিমান বাহিনীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ও অবকাঠামোতে রিয়েল-টাইম হামলার নির্দেশ দিয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গজুড়ে তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা সোমবার গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী একমাত্র প্রধান সড়কটিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। একই সময়ে দুই দিক থেকে গাজার প্রধান শহরে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, তাদের সৈন্যরা হামাসের জিম্মিদশা থেকে ইসরায়েলি এক সৈন্যকে মুক্ত করেছে।
তবে গাজায় হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গের ভেতরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষের তথ্য রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও এই সংঘর্ষের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য জানায়নি।