পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন সেনা এবং ৪৬ জন বিদ্রোহী যোদ্ধা।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় তুয়ারেগ বিদ্রোহীদের সাথে মালির সামরিক বাহিনীর মারাত্মক এই সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোঅর্ডিনেশন অব আজওয়াদ মুভমেন্টস (সিএমএ) নামক একটি জোট গত আগস্ট মাস থেকে মালির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রস্থানের জেরে এই লড়াই শুরু হয়। যদিও জাতিসংঘের ওই শান্তিরক্ষা মিশন বছরের পর বছর ধরে ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে হলেও দেশটিতে শান্ত রাখতে সাহায্য করেছিল।
কিন্তু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সম্প্রতি খালি করে দেওয়া অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
মালির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, মঙ্গলবার তার পক্ষে থাকা ১০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং বোরেমের কাছে তারা একটি আক্রমণ প্রতিহত করেছে। এছাড়া অভিযানের সময় ৪৬ শত্রু যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিএমএ মুখপাত্র মোহাম্মদ এলমাউলউদ রামাদান এর আগে বলেছিলেন, বোরেমে একটি সামরিক ক্যাম্প দখল করার জন্য সিএমএ-এর লড়াইয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই সংঘর্ষে ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন তা উল্লেখ করেননি তিনি।
এলমাউলউদ রামাদান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, খুব মারাত্মক লড়াইয়ের পর সকাল ১০টার দিকে সিএমএ যোদ্ধারা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।’
তিনি পরে রয়টার্সকে বলেন, সিএমএ তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটেছে এবং সেনাবাহিনী বোরেম শহর দখল করে নিয়েছে। ক্যাম্পটি দখলে রাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য ছিল না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অতীতে সিএমএ’র কৌশল ছিল অস্ত্র, যানবাহন এবং গোলাবারুদ নেওয়ার জন্য সামরিক শিবিরগুলোতে আক্রমণ করা। যদিও মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় তেমনটি ঘটেছিল কিনা তা বলেননি তিনি।
এছাড়া মালির এই অঞ্চলে ঠিক কি ঘটেছে তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি রয়টার্স।
মালির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, বোরেমের চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া বেঁচে থাকা বিদ্রোহীরা উত্তর দিকে পিছু হটেছে বলেও মঙ্গলবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, মালির উত্তরাঞ্চলের আধা-যাযাবর তুয়ারেগ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে সিএমএ গঠিত হয়েছিল। এসব মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অবহেলার অভিযোগ করে আসছেন এবং তাদের মরুভূমি অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সাল থেকে মালি শাসন করছে সামরিক জান্তা। নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকায় দেশটিতে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দুটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কেইতার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর জান্তা যখন ক্ষমতা দখল করে তখন তাদের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন ছিল।
মূলত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিতর্কিত নির্বাচন এবং দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতায় ক্ষুব্ধ ছিল জনগণ। এরপর থেকে মালির সামরিক সরকার দেশের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দেশ মালি খুবই দরিদ্র। এছাড়া সাহেল অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যে সংঘাত চলছে মালি তার উপকেন্দ্র। বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে হাজার হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্ত্যুচুত হয়েছেন।