পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী করে দেশটিতে জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে। জোটের প্রধান দুই শরিক পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকার গঠন নিয়ে গতকাল বুধবার বৈঠক করেছে। দুই দলের সমন্বয় কমিটিতে থাকা নেতারা ইসলামাবাদে এ বৈঠক করেন। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় তাঁদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
গতকালের বৈঠকের পর পিপিপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে একমত হয়েছেন দুই দলের নেতারা।
পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় তাঁর দলের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কয়েকটি সাংবিধানিক পদ নিয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিষদের স্পিকার, পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের চেয়ারম্যান এবং চার প্রদেশের গভর্নরের পদ পেতে চায় পিপিপি। শরিকদের মধ্যে জাতীয় পরিষদে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭ আসন পাওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানকে (এমকিউএম-পি) ছয়টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পিএমএল-এন। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় রয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানবিরোধী শিবিরের বেশির ভাগ দল নতুন এই জোট সরকারে যোগ দিচ্ছে। তবে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের যে মোর্চা করে ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে হটানো হয়েছিল, সেই পিডিএমের প্রধান জমিয়ত উলামা-ই-ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রেসিডেন্ট ফজলুর রহমান এই সরকারে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি শাহবাজ শরিফের প্রতি তাঁদের সঙ্গে বিরোধী দলের আসনে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আর কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলেছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দিয়ে ইমরান খানকে সরকার গঠনের ক্ষমতা (ম্যান্ডেট) দিয়েছিল। কিন্তু রাতের আঁধারে সেই ক্ষমতা চুরি করা হয়েছে।
ভোটে কারচুপি ও ফলে জালিয়াতির অভিযোগে গতকালও পাকিস্তানের সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। পিটিআই ছাড়াও জমিয়ত উলামা-ই-ইসলামসহ কয়েকটি দলের নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভ করেন।
৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই জোট সরকার গঠনের তৎপরতা শুরু করে দলগুলো। নির্বাচনের পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার রাতে পিএমএল-এন ও পিপিপিসহ সমমনা দলগুলো নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। সূত্র জানিয়েছে, সরকার গঠনের পর ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হতে পারে। এটা সামনে রেখে জাতীয় পরিষদ সচিবালয় কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হতে পারেন জারদারি
জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়ালের বাবা ও দলের কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে। শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে পিপিপির সমর্থনের বিনিময়ে আসিফ আলী জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে পিএমএল-এন।
এ বিষয়ে পিপিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে জারদারির প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিলাওয়াল বলেছিলেন, ‘বর্তমানে দেশ জ্বলছে। এই আগুন যদি কেউ নেভাতে পারেন, তিনি হলেন আসিফ আলী জারদারি।’ আর আসিফ আলী জারদারি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘আপনাকে আমরা হতাশ করব না।’
একদল অপরাধী এক জোট হয়েছে: পিটিআই
পিএমএল-এন, পিপিপিসহ সমমনা দলগুলোর জোট সরকার গঠনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই বলেছে, জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, এমন একদল অপরাধী এক জোট হয়ে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, দেশ ভয়াবহ সংকটে আছে। পিটিআইয়ের মুখপাত্র রউফ হাসান গতকাল এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইমরান খানের ওপরই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আস্থা রেখেছে। জনগণ তাঁকেই সরকার গঠনের ক্ষমতা (ম্যান্ডেট) দিয়েছে। কিন্তু রাতের আঁধারে সেই ক্ষমতা চুরি করা হয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক নীতি ও মূলবোধের ওপর চরম আঘাত।
কারাবন্দী ইমরান খানও এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। পরিবারের মাধ্যমে কারাগার থেকে পাঠানো একটি বার্তা তাঁর এক্স হ্যান্ডলে মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ করা হয়। তাতে ইমরান খান বলেছেন, ‘চুরি করা ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের বিরুদ্ধে সাবধান করে দিচ্ছি। দিনদুপুরে এমন চুরি শুধু দেশের জনগণের প্রতি অসম্মান নয়, একই সঙ্গে তা দেশের অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলবে।’
এদিকে জোট করে খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠনে পিটিআইয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে জামায়াত-ই-ইসলামি (জেআই)। জেআইয়ের প্রাদেশিক আমির মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান গতকাল বলেছেন, পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট করবে না তাঁর দল। আর পিটিআই তাঁদের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করার যে কথা বলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।