ভারতে শুরু হচ্ছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) শুরু হয়ে লোকসভার ৫৪৩ আসনে মোট সাত দফায় ভোট নেয়া হবে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ৪ জুন। তবে সব রাজ্যে সাত দফায় ভোট হচ্ছে না। মোট তিনটি রাজ্যে ৭ দফায় ভোট নেয়া হবে। রাজ্যগুলো হলো-পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার।
গোটা দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) প্রথম দফায় ২১টি রাজ্যের (১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত) ১০২টি আসনে ভোট নেয়া হবে। একই সঙ্গে শুক্রবার অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনে ভোট নেয়া হবে।
শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসনে ভোট নেয়া হচ্ছে। এই আসনগুলো হলো-কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি। কমিশন জানিয়েছে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার ভোট দেবেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ভারতের মধ্য-ডান এবং ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট-ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ‘ইনডিয়া’ জোটের মধ্যে।
ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের মূল দল ভারতীয় জনতা পার্টি এককভাবে এবার ৩৭০ আসনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে। তবে জোটগতভাবে তাদের লক্ষ্য ৪০০ আসন। গতবার বিজেপি-এনডিএ জোট ৩০৩ আসন পেয়েছিল, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৩০০ আসন। অর্থাৎ ২০১৯ সালের চেয়ে এবার ১০০টি আসন বেশি পেতে চাইছে জোট।
ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার গত ১৬ মার্চ দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লোকসভা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। তফশিল অনুযায়ী, প্রথম দফার ভোটের দিন ১৯ এপ্রিল, এরপর ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে এবং ১ জুন সবশেষ ৭ম দফার ভোট নেওয়া হবে।
এবার ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। মোট ১০ লাখ ভোটকেন্দ্রে ৫৫ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশ করা হবে। লোকসভা আসন কম এমন কয়েকটি রাজ্যে মাত্র এক দিনেই ভোট হবে। কিন্তু যেসব রাজ্যে আসন বেশি সেখানে কয়েক দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতে মোট ২ হাজার ৬০০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর নিজস্ব প্রতীক রয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রতীক পদ্ম, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের হাত আর অন্যান্য দলের হাতি থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, ঘাসফুল, চিরুনি বা তীর নানাবিধ প্রতীক রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনে শুক্রবার যারা লড়ছেন:
কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়। আরও রয়েছে রয়েছে অন্য ছোটখাটো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তবে মূল লড়াই পদ্ম বনাম ঘাসফুল।
জলপাইগুড়ি আসনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায়, বামফ্রন্টের সিপিএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ। রয়েছে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা, বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাও।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি আসনেই জয় পেয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায় এবং আলিপুরদুয়ারে জন বারলা। এবারও প্রথম ধাপের এই তিনটি আসনেই জয়ের ব্যাপারে বিজেপি আশাবাদী। এবিপি আনন্দ ও সি-ভোটারের জনমত জরিপও তাই বলছে। জরিপের ইঙ্গিত, প্রথম পর্বের তিনটি আসনেই জিততে চলেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূল বলেছে, এই রাজ্যের মানুষ এখনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষে। এবার তারা এই তিন আসনে ধর্মান্ধ বিজেপিকে পরাজিত করে ইন্ডিয়া জোটের হাত শক্তিশালী করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস ২টি আসনে। বামফ্রন্ট ছিল শূন্য।