নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন, নানা বৈচিত্র্য পাহাড়ি ঝর্ণাধারা আর সবুজের উঁচু নিচু সমাহারপূর্ণ রামগড় উপজেলা। এখানে রয়েছে আকাশ-পাহাড়ের মিতালী, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেষা ফেনী ও পিলাক নদী উপত্যকার বিস্তীর্ণ সমতল ভূ-ভাগ ও পাহাড়ি-বাঙালিদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা।
বাংলাদেশের রূপের রাণীখ্যাত পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় একমাত্র উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। পাহাড়ঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও হর্টিকালচার সেন্টার: রামগড় সদর থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পূর্বেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও হর্টিকালচার সেন্টার। সবুজের অফুরন্ত সমারোহ আর স্বপ্নীল আবেশে যদি নিজেকে ভুলতে চান তবে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আদর্শস্থান। পাহাড়ের বুক চিড়ে রাস্তার দু’পাশে ফলের বাগান, নানান প্রজাতির পাখি দেখে আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন আরেকবার।
রামগড় পর্যটন লেক: উপজেলা প্রশাসন কেন্দ্রিক ইংরেজী ডবিøও বর্ণমালার আকৃতিতে ২৫০ মিটার লম্বা রামগড় লেক। লেকের উভয় পাশে রয়েছে যানবাহন চলাচলের রাস্তা ও মাঝখানে একটি সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু। প্রাকৃতিক পরিবেশ বান্ধব এই মনোরম লেকে প্রবেশ দ্বারে ১নং গেটে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধারে স্মৃতি বিজড়ীত বিজয় ভাস্কর্য এবং ডানপাশে রয়েছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের আরেকটি শহীদ মিনার। লাচাড়ী পাড়া (কলসি মুখ): পার্বত্যাঞ্চলের গর্ব দৃষ্টিনন্দন তীব্র প্রবাহমান খরস্রোতা নদী হলো ফেনী নদী। এ নদীর কুলঘেসে দেখতে অবিকল কলসীর আকৃতিতে গড়ে উঠেছে বলেই গ্রামটির নাম দেয়া হয়েছে কলসী মুখ। ১শ’ থেকে ১ শত বিশ গজ দৈর্ঘ্যর প্রবেশ প্রথটির ভেতরটা অবিকল কলসীর আদলেই গড়া। আর এ কারণেই গ্রামটি এখন রামগড় উপজেলার একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু ১: ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে ভারত-বাংলাদেশের দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষে ফেনী নদীর উপর রামগড়-সাব্ররুম এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তি প্রস্তুর উদ্বোধন করেন। এ ব্রিজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, ব্যবসা, পর্যটনসহ সু-সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করবে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা রামগড় উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে ফেনী নদীতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
রামগড় চা বাগান: রামগড় উপজেলায় প্রবেশের পূর্বে রয়েছে মনোরোম পরিবেশে গড়া রামগড় চা বাগান। যার আয়তন ১৩.৯৯ একর। শীতের সময়কালে চা বাগানের লেকে অতিথি পাখি আগমন ঘটে। যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
প্রাচীনতম মহামনি বৌদ্ধ বিহার: রামগড় মহামনি বৌদ্ধ বিহারটি মারমা রাজা নিপ্রুসাইন ১৮৯৪ সালে বৌদ্ধ বিহারটি স্থাপিত করেন। বৌদ্ধ মুর্ত্তিটি কাসা ও স্বর্ণ দিয়ে তৈরি যা ৮ হাত লম্বা ৪ হাত প্রস্থ।
মিঠা পানি হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল: এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। পার্বত্যাঞ্চল থেকে শুরু হওয়া মৎস প্রজননের জন্য বিশ্বখ্যাত এ নদীটি রামগড় উপজেলার ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদাছড়া থেকে উৎপত্তি হয়ে ফটিকছড়ির মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট ও অন্যান্য অংশ হাটহাজারী, রাউজান হয়ে চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালী থানা হয়ে কালুরঘাট নিকটে কর্ণফুলী নদীতে মিশে গেছে।
এসডিও ডাক বাংলো: ১৯২০ সালের প্রাচীনতম সাবেক মহকুম শহর রামগড় প্রাণ কেন্দ্রেই ফেনী নদী তীর ঘেষে গড়ে উঠা এসডিও ডাক বাংলো। যা পর্যটকদের অবশ্যই মুগ্ধ করবেই।
কোথায় থাকবেন: পর্যটকদের জন্য রামগড়ে রয়েছে জেলা পরিষদ গেস্ট হাউস, রামগড় পাহাড়িঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র গেস্ট হাউস, পাইলট বাগান গেস্ট হাউস, রামগড় চা বাগান গেস্ট হাউসসহ বোডিং এ থাকতে পারেন।
যেভাবে আসতে হবে : রাজধানী ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রামগড়ের দুরত্ব প্রায় ২৬১ কি.মি. এবং চট্টগ্রাম হতে প্রায় ৯৯ কি.মি.। ঢাকা থেকে রামগড় খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বিভিন্ন বাস ছাড়ে প্রতিদিন ১০/১৫টি। সায়দাবাদ, কমলাপুর, গাবতলী, ফকিরাপুল কলাবাগান ও টিটিপাড়া থেকে টিকেট সংগ্রহ করে এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, সেন্টর্মাটিন ও শান্তি পরিবহনে সরাসরি রামগড়ে আসা যায়। তাছাড়া ঢাকা থেকে ফেনী এসে হিলকিং বা হিলবার্ড, সিএনজি ও নিজস্ব পরিবহন যোগে বারৈইয়ার হাট হয়ে রামগড়ে আসা যায়।
আরও পড়ুন
১৮ মে, ২০২৪ ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ
৩ এপ্রিল, ২০২৪ ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
২৯ মার্চ, ২০২৪ ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ