সংঘাত-সহিংসতা-অবরোধ, রাজনৈতিক উদ্বেগ আর সমঝোতার নানামুখী চেষ্টার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর তা না হলে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবারের জন্য।
গেলো ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে সব মহলেই আলোচনা চলছে। সংশয় আর উদ্বেগ থাকার পরও নির্বাচনের দিনক্ষণ জানার অপেক্ষায় আছে দেশের কোটি কোটি ভোটার। ফলে সবার নজর এখন ইসির দিকে।
এদিকে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পঞ্চম দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো ‘সতর্কতামূলক প্রতিরোধ কর্মসূচি’ দিয়ে রেখেছে। এসব রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবেও ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া এবারের জাতীয় নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ, এতোগুলো ক্যামেরার ফিড পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হবে।
গত ৯ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনুমতি নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রুত সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এছাড়া তফসিল ইস্যুতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন সিইসি।
এদিকে তফসিল ঘোষণা না করার জন্য বিরোধিতা করে আসছে বিরোধী দলগুলো। বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করে নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের দাবি জানান। তিনি বলেন, শিডিউল ঘোষণা করবেন না, করলে জাতি আপনাদের অভিশাপ দেবে। এর ফলে সংবিধানও লঙ্ঘন হবে, অন্যায়ও হবে।
ভোটারদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি— আপনারা শিডিউল দেয়া থেকে বিরত থাকেন। দয়া করে পদত্যাগ করেন। এ জাতীয় কলঙ্ক আপনারা ঘাড়ে নেবেন না।
তিনি আরও বলেন, শিডিউল ঘোষণা করলেও ভোটাধিকারের আন্দোলন চলবে, বা আরও কিছু করলেও চলবে।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত হালনাগাদে দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন।
আগামী ৬ থেকে ৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন নির্বাচন হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।