যেকোনও গুজবের ডালপালা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর নির্বাচন হলে তো কথাই নেই। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মোক্ষম সময়। ফলে সরকার এ বিষয়টি নিয়ে এবার বেশি সচেতন রয়েছে। আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নিজেদের চাওয়াটা জানিয়ে দিয়েছে। ফেসবুক, টিকটক ও গুগলের কাছ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
ফেসবুক, টিকটক ও গুগলের সঙ্গে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে বৈঠক করা শুরু করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও প্রাধান্য পেয়েছে নির্বাচন। তবে ফেসবুক, টিকটক ও গুগলকে ঠিক কী বলা হয়েছে, কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা সেসব বিষয়ে জানা যায়নি।
আলোচনার বিষয় এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে।
টিকটকের জনসংযোগ বিভাগে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে যা কিছু টিকটকের পক্ষ থেকে আছে তার সবই নিউজ রুমে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, আমাদের সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, টিকটকের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে তারা আমাদের চাওয়া মেনে চলবে বলে জানিয়েছে। তারা আমাদের তাদের কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কথা জানিয়েছে।
তিনি আরও জানান, টিকটক শতভাগ মেইনটেইন করছে। ফেসবুক, গুগল (ইউটিউব) তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিষয় নিয়ে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি তারাও ঠিক হয়ে যাবে।
চলতি বছরের জুন মাস থেকে পর্যযায়ক্রমে টিকটক, ফেসবুক, গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিটিআরসি। শুরুতে টিকটকের সঙ্গে বৈঠক হয়। আগস্টে হয় ফেসবুকের সঙ্গে। এরপরে সেপ্টেম্বর মাসে গুগল-ইউটিউবের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সম্পর্কে জানানো হয়। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেন কোনও ধরনের ভুল তথ্য, ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ইত্যাদি প্রচার না হয় সেজন্য সতর্কতার সঙ্গে চেক করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। অনেক বিষয়ে আলোচনা হলেও মূল আলোচনা নির্বাচনকেন্দ্রিক ছিল বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বৈঠক উপস্থিত একটি সূত্র।
টিকটক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি তাদের নিউজরুমে বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের সময় ‘আমাদের কমিউনিটিকে সমর্থন’ শিরোনামে নির্দেশনামূলক একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে। যদিও টিকটক কোনও রাজনৈতিক বা রিয়েল-টাইম সংবাদের অ্যাপ নয়, তবুও আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমাদের অ্যাপে কোনও নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনা হয়ে থাকলে আমরা যেন আমাদের কমিউনিটিকে সঠিক তথ্যে একসেস দিতে পারি। মিথ্যা তথ্য, সহিংসতা এবং বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।
পেইড রাজনৈতিক প্রচার রেস্ট্রিকটেড করাও টিকটকের লক্ষ্য বলে জানানো হয়। টিকটক বলেছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত তথ্য খুঁজছেন এমন ব্যবহারকারীদের জন্য আমরা আমাদের বাংলাদেশ ইলেকশন সেন্টার হাবটি চালু করেছি। সেখানে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ‘হাউ মেটা ইজ প্ল্যানিং ফর ইলেকশানস ইন ২০২৪’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করলেও বাংলাদেশের নাম বলা হয়নি। তবে ২০২৪ সালে দেশের জাতীয় নির্বাচন বলে বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,আমরা নিয়মিত নির্বাচন সংক্রান্ত নীতিমালা রিভিউ ও হালনাগাদ করছি। কোনও কনটেন্ট আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভায়োলেট করলে আমরা অ্যাকশনও নিচ্ছি। আমাদের নির্বাচন সংক্রান্ত নীতিমালার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন ও ভোটার ইন্টারফিয়ারেন্স, হেট স্পিচ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রচার ইত্যাদি কনটেন্ট রিমুভ করা।