ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইট রবিশপের নাম ও লোগো ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রতারণার মূল হোতা আল ইমরান জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
বুধবার (১৯ জুলাই) ভোরে নোয়াখালীতে পরিচালিত অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নকল রবিশপ ওয়েবসাইটের ব্যাক আপ কপি সংবলিত একটি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।
সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ই-কমার্স সাইট রবিশপের ওয়েবসাইট অনুকরণে ভুয়া ওয়েবসাইট ও রবি বাংলাদেশ নামে ফেসবুক পেজ বানিয়ে আল ইমরান জুয়েল দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রির নামে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। এ বিষয়ে রবি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ গত ১০ জুলাই গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে মূল হোতা জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসি জানায়, প্রতারক চক্রটি জাপানভিত্তিক ডোমেইন ও ওয়েব হোস্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে রবিশপের অনুকরণে রবি শপার নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে বিভিন্ন পণ্যে ৫০-৭০% পর্যন্ত আকর্ষণীয় ছাড়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করত। বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে ক্লোন করা ছবি।
ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে জুয়েল রবি বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক পেজও তৈরি করেছিল। সাধারণ মানুষ এই ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজকে প্রকৃত রবিশপের এর মনে করে কেনাকাটা করার জন্য রবি শপার ওয়েবসাইটে দেওয়া বিকাশ, নগদ ও রকেট নম্বরে টাকা পরিশোধ করত।
ভুয়া ওয়েবসাইটটি কারিগরি দিক বিবেচনায় এতটাই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল যে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হতেন। নিজেদের আড়াল করার জন্য প্রতারক চক্রটি সাধারণ গ্রাহকদের হেল্প লাইন নম্বর হিসেবে অনলাইন টেলিফোন সার্ভিস ব্রিলিয়ান্টের একটি নম্বর সরবরাহ করত। এছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা রবি শপার ওয়েবসাইটে দাপ্তরিক একটি ঠিকানাও দিয়েছিল।
এই গ্রুপটি অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে নকল ওয়েবসাইটে একেক সময় একেক বিকাশ, নগদ ও রকেট নম্বর দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করত। এভাবে খুব অল্প সময়েই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জুয়েল একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার এবং তিনি এই চক্রের মূল হোতা ও ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার।
এসি তুহিন জানান, আগেও এই প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া যেমন- দারাজ ও রিয়েলমি হ্যান্ডসেটের ওয়েবসাইট বানিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। জুয়েলকে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।