নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মঙ্গলবার কমিটির বৈঠকে ১৫টি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে নেপাল থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ কেনার এ প্রস্তাবটিও রয়েছে। নেপালের সঙ্গে ছয় বছর আগে আলোচনা শুরু হলেও নেপাল-ভারতের আনুষ্ঠানিক সমঝোতার পর প্রকল্পটি এবার গতি পেল।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়নের বোর্ডের (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ বিভাগ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করার প্রস্তাব দিলে সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এইএ), ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) এবং বিপিডিবি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নেপাল থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ দশমিক ১৭ টাকা। ভারতীয় গ্রিড হয়ে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। এই বিদ্যুৎ আমদানির জন্য অবকাঠামো নির্মাণে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে ভারতকে মাশুল দিতে হবে। তবে এই মাশুল এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। মাশুলসহই আমদানি করা বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি গড়ে ৯ টাকার নিচেই থাকবে বলে জানিয়েছে পিডিবি।
বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। এর দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা থেকে ১৪ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন গড় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি ১০ টাকার বেশি। এর মধ্যে ইউনিট প্রতি ৫৬ টাকা দাম পড়ে এমন কেন্দ্রও রয়েছে।
গত বছরের জুনে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল ভারত সফর করেন। ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নেপালের। ওই চুক্তি অনুযায়ী, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন দিয়ে। তবে এরপরও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি আটকে ছিল। আরও ছয় বছর আগে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে দুই দেশ।
নেপাল থেকে এ বিদ্যুৎ আমদানির জন্য গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী নেপালের ত্রিশূলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট, অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা। বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনে এ বিদ্যুৎ আসবে ভারতের বহরমপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে। এরপর নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি, ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চুক্তি সই হবে। তাহলেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করা যাবে। ইতিমধ্যে ভারতের এনটিপিসি সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে পিডিবি।
ভারত থেকে তিনটি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সরকারিভাবে তিনটি চুক্তি রয়েছে ভারতের এনভিএনের সঙ্গে। দুটি চুক্তির মধ্যে একটি চুক্তির ইউনিট প্রতি দাম ৪ টাকা ২২ পয়সা পড়েছে গত বছরে, অন্য চুক্তিতে একই সময়ে পড়েছে ৭ টাকা ১৫ পয়সা। এই চুক্তির আওতায় আমদানি করা বিদ্যুৎ আসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা দিয়ে। এ ছাড়া ত্রিপুরা থেকে এনভিএনের বিদ্যুতের গড় আমদানি ব্যয় গত বছর পড়েছিল ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। এছাড়া ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ডে রয়েছে, সেখান থেকে আনা বিদ্যুতের গড় মূল্য গত বছরে ছিল ১৪ টাকা ২ পয়সা।