বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তা জটিলতাসহ নানা সমস্যায় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় অবস্থিত দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ও বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে চালু হওয়া সীমান্ত হাটটি গত ২২ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ হাটে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ২৭ আগস্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বর্ডার (সীমান্ত) হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা করা হয়েছে। যেখানে পুলিশ, বিজিবি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একাধিক সমস্যা তুলে ধরেন।
সভায় সীমান্ত হাটে নিরাপত্তাহীনতা, জনবল সংকট ও নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া হাট থেকে বৈধ উপায়ে ক্রেতা যে পরিমাণ পণ্যদ্রব্য কিনতে যায়, তারচেয়ে বহুগুণ অবৈধভাবে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে আসছে বলে জানান তারা। সীমান্ত হাটকে কেন্দ্র করে কাঁটাতারের পাশে সন্দেহাতীতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য বাংলাদেশি। এতে সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, সীমান্ত হাটের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যেসব বাক্স বাংলাদেশে ঢুকছে, সেগুলোতে কী রয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না বলে জানিয়েছে বিজিবি। যা রাষ্ট্রীর নিরাপত্তায় বড় চিন্তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিয়ে নেই কোনো হালনাগাদ তথ্য। সভায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাঁটাতার উঁচু করা, প্রয়োজনে পরিখা খনন ও জনবল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিজিবি।
হাটে ভারত থেকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্যদ্রব্য আসছে তার বিপরীতে সামান্য পরিমাণই ভারতে যাচ্ছে বলে সভায় উল্লেখ করেন কাস্টমস বিভাগ। যে পরিমাণ শুল্ক ভারতীয়রা পাচ্ছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ ধারে কাছেও নেই বলে জানান তারা। এতে সীমান্ত হাটে তৈরি হচ্ছে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি।
এদিকে সীমান্ত হাটকে চোরাকারবারিদের নিজস্ব হিসাব-নিকাশের নিরাপদ স্থান হিসেবেও ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চোরাকারবারিরা প্রতি মঙ্গলবারে ক্রেতা সেজে এ হাটে এসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও অভ্যন্তরীণ লেনদেন করে থাকে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে পণ্যদ্রব্য।
এ বিষয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বৈধভাবে আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্য বিক্রি করছি। কিন্তু সীমান্ত হাটের সুবিধা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করা অবৈধ পণ্যের দামের সঙ্গে আমাদের পণ্যের দামের অনেক বড় ব্যবধান থাকে। এতে সবসময় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যদি বাজারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে তাহলে সেটি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হওয়া উচিত।
ফেনী জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্ত হাটের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে ৩ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সীমান্ত হাট বন্ধের ব্যাপারে ভারতের ত্রিপুরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের মধুগ্রাম ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু করা হয় এ সীমান্ত হাট। প্রতি মঙ্গলবার এ হাটে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে ঢুকে অবাধে ভারতীয় পণ্য কিনতেন। অপরদিকে ভারতীয় অংশে নানা বাধা-নিষেধে অনেকটা ক্রেতা শূন্য ছিল হাটের বাংলাদেশি পণ্যের বাজার। এর আগে করোনা মহামারির কারণে তিন বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল সীমান্ত হাটটি।