আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তার ওপর হামলায় দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত জোটের নেতারা।
বুধবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনো আপস করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
গণ আজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার বলেন, ‘বৈঠকে গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মারধর (হিরো আলম) করার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। সভায় উপস্থিত সবাই বলেছেন যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলের কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হিরো আলম নিয়ে কী কথা হয়েছে? জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, ‘হিরো আলমকে মারধর করার বিষয় নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে কথা হয়েছে। সবাই বলেছেন নির্বাচন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তো নয়ই, তাকে কেন মারধর করতে হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত খুঁজে বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন নিজের দলের কেউ থাকলেও আইনের আওতায় আনবেন।’
বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ বলেন, ‘হিরো আলমকে কারা হিরো বানাচ্ছে, এটা দেখতে হবে। কারা আক্রমণ করেছে সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি, যারা মারধর করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি জহির হাসান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি আরশ আলী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের সভাপতি আইভী আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, সদস্য হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজাহার, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
এদিকে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক সভা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জোটভুক্ত দলগুলোর জাতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী অসীম সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতা নিয়ে যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশকে তার সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। দেশ বিরোধী চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করছে।
এতে বলা হয়, একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ১৪ দল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনও আপস করবে না।