খাগড়াছড়ির রামগড়ে ভার্মি কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) উৎপাদনে অনেকের মধ্যে সফল উদ্যোক্তা কৃষক কাজী আবুল কালাম আজাদ ।রামগড় পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এর বড় ছেলে।তিনি এখন উপজেলার অনেক কৃষকের অনুপ্ররণা।বর্তমানে ২২০টি রিং থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৩ টন সার উৎপাদন করেন। কৃষি অফিসের সহায়তায় ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরী করতে প্রয়াজনীয় ধারণা ও প্রশিক্ষন নিয়ে তার যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা কাজী আবুল কালামের সাথে কথা বলে জানা যায়,২০১৮ সালের শুরুর দিকে প্রথমে নিজের প্রয়োজনে স্বল্প কয়েকটি রিং বসিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে নিজের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত অতিরিক্ত সার বিক্রি শুরু করেন। সারের গুনাগুনে কৃষকরা ভাল ফলন পাওয়ায় এর চাহিদা বেড়ে যায়। কৃষকদের প্রচুর চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক চিন্তায় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কাজ শুরু করেন। বর্তমান ২২০ টি রিং থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৩ টন সার উৎপাদন করেন।
প্রকৃতির নাঙ্গল কেঁচো জমির উর্বরতা বাড়ায়। কেঁচো দ্বারা উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের ভাল ফলন পাওয়া যায়। ফসলের গুন, স্বাদ ও মান ভাল থাকে। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে দিন দিন জমিতে থাকা পোকা মাকড়সহ জমির উর্বরতা রক্ষাকারী কীটপ্রতঙ্গ মারা যায়। ফলে ভাল ফলন পাওয়া যায় না। কেঁচো সার ব্যবহার করলে উর্বরতা রক্ষাকারী পোকা মাকড়ের ক্ষতি হয় না। আবুল কালাম আরও বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে ভার্মি কম্পোষ্ট জমিতে ব্যবহার শুরু করি। এই সার ব্যবহারের ফলে আশানুরুপ ফলন পেয়েছি। তাই সার তৈরীতে আগ্রহ বেড়েছে। ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরীতে খরচ কম। বিক্রি করে লাভ বেশী হয়। তৈরী করতে সময় লাগে বর্ষাকালে দুই থেকে আড়াই মাস গ্রীষ্মকালে এক থেকে দেড় মাস। বর্তমানে দুইটি সেডে ২২০ রিং এর মাধ্যমে কেঁচো সার উৎপাদন করছি। প্রতি মাসে গড়ে ৩ টন সার উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। অনেক সময় স্থানীয় কৃষকরা বাড়ীতে এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। সার বিক্রি করে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। প্রতি কেজি সার ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করা যায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,ভার্মি কম্পোষ্ট সার তৈরি করতে বসত বাড়ীর আঙ্গীনায় টিনের ছাউনি দিয়ে দুইটি সেড প্রস্তুত রয়েছে।সেডের ভিতর তিন স্তরের সিমেন্টের তৈরী রিং সারি করে সাজিয় রাখা রয়েছে। রিং গুলোতে গোবর, কলা গাছের ছোট ছোট টুকরা, সাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ মিশ্রিত করে ঢেকে রাখা হয়েছে। তাতে দেওয়া হয়েছ কেঁচো।৩০ থেকে ৪০ দিনের বাশি উপকরণগুলো খেয়ে কেঁচো যে মল ত্যাগ করে এবং তার শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বের করে দেওয়ার পর যে মল সৃষ্টি হয় তাই কেঁচো বা বার্মি কম্পোষ্ট। রামগড় কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফ উল্ল্যাহ বলেন,কৃষি বিভাগ হতে প্রশিক্ষন নিয়ে অনেকেই ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরে সার উৎপাদন শুরু করেছে।এর মধ্যে কাজী আবুল কালাম একজন সফল উদ্যোক্তা।ভার্মি কম্পোষ্ট ব্যবহারের ফলে মাটির প্রাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাছাড়া রামগড়ে বেকার যুবকেরা তার দেখাদেখি ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনে এগিয়ে আসছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন,উপকরণ সহজলভ্যতা ও সময় কমের জন্য ভার্মি কম্পোষ্ট দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।এ সার ব্যবহারে ফসলের পুষ্টিগুন বৃদ্ধিপায়।বাজারেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
-মোঃ মোজাম্মেল হোসাইন